বেঙ্গালুরু, ২৮ মে: আইপিএল নাইনের ফাইনালে আজ, রবিবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দুই দলের সামনেই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। ২০০৯ ও ২০১১ সালে আরসিবি ফাইনালে উঠে খেতাব জিততে পারেনি। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে এবার ট্রফির খরা কাটাতে মরিয়া রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
ডেকান চার্জার্স সাসপেন্ড হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সেবারই তারা প্লে-অফে খেলেছিল। এবার ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে হায়দরাবাদ ফাইনালে উঠেছে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ওয়ার্নার এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে দলকে খেতাবের শেষ ধাপে উন্নীত করতে পেরেছেন। ওয়ার্নারকে ঘিরেই প্রথমবার আইপিএল জেতার স্বপ্নে বিভোর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সমর্থকরা।
ফাইনালে আরসিবি’র বাজি এবি-বিরাট জুটি। দারুণ ছন্দে রয়েছেন অধিনায়ক কোহলি। এবারের আইপিএলে ১৫টি ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৯১৯ রান। ডি’ভিলিয়ার্স প্রায় একক দক্ষতায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ফাইনালে তুলেছিলেন। এখনও অবধি তিনি ৬৮২ রান করেছেন। এছাড়া নজর থাকবে ক্রিস গেইলের দিকে। তাঁর ব্যাটে ধারাবাহিকতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঠিকই, তবে যেদিন তিনি ফর্মে থাকবেন সেদিন গেইল-ঝড়ে উড়ে যাবে বিপক্ষ শিবির। অলরাউন্ডার হিসাবে শেন ওয়াটসন বেঙ্গালুরু দলে একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছেন। কখনও বল হাতে, কখনও ব্যাট হাতে তিনি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। লোকেশ রাহুল দায়িত্বশীল ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন কয়েকটি ম্যাচে। তাঁকে ঘিরেও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে বেঙ্গালুরু শিবিরে। শচীন বেবি ঝোড়ো ইনিংস খেলতে পারদর্শী।
বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং যতটা শক্তিাশালী, বোলিং ততটা নয়। যুজবেন্দ্র চাহালের মতো লেগ স্পিনার নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বাকিরা সেভাবে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। এই ম্যাচে ইকবাল আবদুল্লার খেলা নিশ্চিত। কারণ, গত ম্যাচে দলকে এবি ডি’ভিলিয়ার্সের পাশে দাঁড়িয়ে জেতাতে ব্যাট হাতে তাঁরও বড় ভূমিকা ছিল। শেন ওয়াটসন, স্টুয়ার্ট বিন্নির সঙ্গে ক্রিস জর্ডনের খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাগজে কলমে ফাইনালে বেঙ্গালুরুর পাল্লা কিছুটা ভারী। তবে লিগ পর্বের ম্যাচে বেঙ্গালুরুকে কিন্তু হারিয়েছিল সানরাইজার্স। আসলে এই পর্যায়ের লড়াইয়ে স্নায়ুর প্রবল চাপ থাকে। সেটা যারা কাটিয়ে উঠতে পারবে তাদেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাছাড়া বেঙ্গালুরু ঘরের মাঠ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলবে। দু’দিন বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছেন কোহলিরা। বিপুল দর্শক সমর্থন পাবেন ডি’ভিলিয়ার্স, বিরাট কোহলিরা। দু’জনেই বিগ ম্যাচ প্লেয়ার।
এত কিছুর পরেও কিন্তু বেঙ্গালুরুর পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সহজ নয়। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বড় চমক দিতে পারে ফাইনালে। বিশেষ করে ডেভিড ওয়ার্নার যেরকম ফর্মে আছেন, তাতে বেঙ্গালুরুর বোলাররা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ওয়ার্নার উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি দ্রুত গতিতে রান তোলায় পারদর্শী। ওপেনিং জুটিতে শিখর ধাওয়ান ও ওয়ার্নার জুটি ক্লিক করে গেলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলবে বেঙ্গালুরুকে। ওয়ার্নার-ধাওয়ান ছাড়াও যুবরাজ সিংয়ের দিকেও নজর রাখতে হবে। আইপিএল নাইনে সেভাবে তিনি নজর কাড়তে না পারলেও মিডল অর্ডারে দলকে ভরসা জোগানোর সুযোগ রয়েছে তাঁর সামনে। এছাড়া মোজেস হেনরিকস, দীপক হুদা, নমন ওঝার মতো তরুণ ক্রিকেটাররা বড় অঘটন ঘটাতে পারেন। গত ম্যাচে গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে বিপুল শর্মা এক অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে। যার ফলে চার বল বাকি থাকতেই জয়ের কড়ি জোগাড় করে নিয়েছিল সানরাইজার্স।
হায়দরাবাদের বোলিং বেঙ্গালুরুর তুলনায় অনেক শক্তিশালী। পেসার ভুবনেশ্বর কুমার নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন। বেগুলি টুপির মালিক তিনি। ১৬ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২৩টি উইকেট। বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান হায়দরাবাদের জার্সি গায়ে এবারের আইপিএলে বড় চমক দিয়েছেন। ১৫ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে গিয়েছে ১৬টি উইকেট। মুস্তাফিজুরের বিষাক্ত কাটার বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতে পারে। তবে চোটের কারণে গত ম্যাচে তিনি খেলতে পারেননি। রবিবার তাঁকে মাঠে নামানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সানরাইজার্স টিম ম্যানেজমেন্ট। বেন কাটিংয়েরও খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
যাই হোক, রবিবার আইপিএলের ফাইনালে বেঙ্গালুরুর ব্যাটিংয়ের সঙ্গে হায়দরাবাদের বোলিংয়ের একটা দুর্ধর্ষ লড়াই দেখার আশায় প্রহর গুণছে ক্রিকেট দুনিয়া।

No comments:
Post a Comment