Wednesday, May 18, 2016

প্রকৃত নেতা কেমন হবেন? গম্ভীরকে দেখে শিখতে পারেন ধোনি

গম্ভীরের এই আত্মত্যাগ অন্য অধিনায়কদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। এবং অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জন্য। প্রকৃত অধিনায়ক মাঠে সতীর্থের ভুলটাকেই আড়াল করেন।
 

কঠিন পরিস্থিতিতেই একজন প্রকৃত নেতাকে চেনা যায়। প্রমাণ করলেন কেকেআর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। হতে পারে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড অনেক ভাল। কিন্তু কঠিন সময়ে দলের সম্মান কীভাবে আদায় করতে হয়, চলতি আইপিএলের কয়েকদিনের ফারাকে ধোনিকে সেই শিক্ষা দিলেন গম্ভীর। সোমবার ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে হারলেও যে ঘটনা কেকেআর-এর অন্দরমহলে গৌতম গম্ভীর সম্পর্কে শ্রদ্ধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার আরসিবি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে তখন ৫০ পার করেছেন গম্ভীর। স্ট্রাইকেও ছিলেন তিনি। উল্টোদিকে ছিলেন মনীশ পাণ্ডে। গম্ভীরের খেলা একটি শট অফ সাইডে ফিল্ডারের হাতে চলে যায়। গম্ভীর কিছু বোঝার আগেই দৌড় শুরু করে দেন মনীশ। ভুল বোঝাবুঝিতে মনীশ প্রায় উল্টোদিকের ক্রিজে পৌঁছে যান। যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তাতে গম্ভীর নিজের ক্রিজে সহজেই ফিরে যেতে পারতেন। সেক্ষেত্রে রান আউট হয়ে ফিরতে হত মনীশকে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে এগিয়ে আসেন গম্ভীর। তিনিই রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এবং মনীশর প্রতি কোনওরকম ক্ষোভ বা রাগ না দেখিয়েই।
ঠিক কয়েকদিন আগে ইডেন গার্ডেনসে এরকমই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেটা ছিল কেকেআর বনাম পুণে ম্যাচ। সেদিন পুণের ব্যাটিংয়ের সময়ে ধোনি স্ট্রাইক করছিলেন। বোলার ছিলেন কেকেআর-এর সুনীল নারাইন। ধোনি বল ঠেলে সিঙ্গল নেওয়ার জন্য দৌড়ন। নন স্ট্রাইক এন্ডে দাঁড়িয়েছিলেন ইরফান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই রান নেওয়া সম্ভব নয়। ধোনি ততক্ষণে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। পাঠানের তরফ থেকে কোনও সাড়া না পাওয়ায় ধোনি নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি। এমন প্রতিক্রিয়া তিনি দেখান, যা সচরাচর ধোনির থেকে দেখা যায়নি। পাঠান ক্রিজ ছেড়ে না বেরোলে ধোনি রান আউট হতেন। রাঁচির রাজপুত্র প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন। হ্যাঁ, দৌড়তে দৌড়তেই। পাঠান আর কী করবেন! ধোনি তাঁর অধিনায়ক। তিনি কল করেছেন। পাঠান না বেরিয়ে পারলেন না। ক্রিজেও পৌঁছতে পারেননি পাঠান। রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হল ইরফানকে। এই ভিডিওটি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের অফিসিয়াল সাইটে আপলোডও করা হয়েছিল। কিন্তু ধোনির প্রতিক্রিয়া এবং যেভাবে তিনি পাঠানকে রান আউট করেন, তা ধোনির ভাবমূর্তি নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট। আইপিএলের অফিসিয়াল সাইট থেকে সেই ভিডিওটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। ভিডিও না হয় ডিলিট করা হলেও অধিনায়ক ধোনির এহেন আচরণ ক্রিকেটমহল সমর্থন করতে পারেননি।
সেই মুহূর্ত। পাঠানের উপরে ক্ষিপ্ত ধোনি।
অনেকেই বলতে পারেন, পাঠানের তুলনায় ধোনির উইকেটে থাকাটা অনেক জরুরি ছিল। কিন্তু তাই বলে নিজের সতীর্থের প্রতি একজন অধিনায়ক এমন আচরণ করবেন? এখানেই গম্ভীরের থেকে শিক্ষা নিতে পারেন মাহি। কারণ, গম্ভীর যখন মণীষের জন্য এগিয়ে গিয়ে রান আউট হলেন, তখন তাঁরও পঞ্চাশ হয়ে গিয়েছে। ক্রিজে থাকলে তিনি আরও বড় রান করতে পারতেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে মনীশ যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। গম্ভীর হয়তো মনে করেছিলেন, ওই পরিস্থিতিতে তাঁর থেকেও মনীশের টিকে থাকাটা জরুরি। দলের স্বার্থেই হয়তো নিজে রান আউট হন। কিন্তু নিজের উইকেট এভাবে দিতে কারই বা ভালো লাগে। তার উপরে তিনি দলের অধিনায়ক। তিনি আউট না হলেও সেভাবে প্রশ্ন উঠত না। কারণ তিনি দলের অধিনায়ক। তাসত্ত্বেও গম্ভীরের এই আত্মত্যাগ অন্য অধিনায়কদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। এবং অবশ্যই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জন্য। সতীর্থের উপরে রাগ দেখানোর জায়গা তো মাঠ নয়। বরং প্রকৃত অধিনায়ক মাঠে সতীর্থের ভুলটাকেই আড়াল করেন।

No comments:

Post a Comment

Comments