Wednesday, May 11, 2016

আবেগ আপ্লুত সালাউদ্দিন

বাবা কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন নির্বাচনী লড়াইয়ে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে বাবার সঙ্গে টেনশনে মেয়ে কাজী সারাজিন। গতকাল ঢাকার পাঁচ তারকা একটি হোটেলে নির্বাচনী কেন্দ্রের ভেতরে ১৩৪ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বাইরে স্বামী অ্যালেক্সকে নিয়ে সালাউদ্দিন-কন্যা উৎকণ্ঠায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ভেতর থেকে খবর আসছে, আবারও বাফুফে সভাপতি হতে যাচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন এসে জানিয়ে দিলেন, ৩৩ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন সালাউদ্দিন। এমন খবরের পরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সালাউদ্দিন-কন্যা। মেয়ের আবেগটা এমন, 'বাবারটা যে আরও বেশি হবে তা অনুমেয়ই ছিল।' নির্বাচনী কেন্দ্রের ভেতরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সালাউদ্দিন। এই কান্না ঐতিহাসিক বিজয়ের। যে জয় নিয়ে ছিল অনেক শঙ্কা। আর এই জয়কে ফুটবল এবং সত্যের জয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন, 'অবশ্যই ফুটবল এবং সত্যের জয় হয়েছে।'

নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ের পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সালাউদ্দিন। সহজে ভেঙে না পড়া কিংবদন্তি এ ফুটবলারের চোখ দিয়ে বের হয়েছে পানি। বাফুফের পাঠানো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সালাউদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদছেন সিনিয়র সহসভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আবদুস সালাম মুর্শেদী। কাঁদতে দেখা গেছে হারুনুর রশিদ, মহিউদ্দিন মহিসহ অনেককে। আর সালাউদ্দিনের জয়ের আনন্দে ছোটদের মতো নাচতে থাকেন কাজী নাবিল আহমেদ। রাত সোয়া ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে জয়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন বলেন, 'কাউন্সিলররা আমাদের নির্বাচিত করেছেন। আমি আমার মন থেকে তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। এত নাটক এবং সব কিছুর পরও তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন ফুটবল সব থেকে বড়। ফুটবলে সত্যবাদিতা সব থেকে বড়। এ দুটি জিনিস পরিষ্কার করে আমাদের এই ২১ জনের প্যানেল তারা নিজেদের হাতে নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন।'

কাউন্সিলর কক্ষে বাবার সেই কান্নার দৃশ্য সরাসরি দেখতে পারেননি মেয়ে কাজী সারাজিন। বাবার জয়ে এতটাই খুশি যে মুখ দিয়ে কথা বের করতেও কষ্ট হচ্ছিল তার। শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে দৌড়াতে প্রতিক্রিয়া জানালেন সালাউদ্দিন-কন্যা, 'এটা সত্যের জয়। আজ (গতকাল) সকালে আমি আব্বাকে বলেছিলাম যে তুমিই জিতবে। তিনি চুপ হয়ে ছিলেন। তার মুখ দেখে বুঝে নিয়েছিলাম আব্বা টেনশনে আছেন। আমি বলেছি, এই নোংরামি কিছু না। এই নোংরামি এড়িয়ে চলো। তুমিই জিতবে।'

গত আট বছরে তার কাজের অনেক সমালোচনা হয়েছিল। টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ায় দায়িত্ব এ আরও বেড়ে গেল সালাউদ্দিনের, 'আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা পালনের চেষ্টা করব। আমি আগেই বলেছি, এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আমি যতটুকু পারি গুছিয়ে নেব, যাতে করে আমার সঙ্গে কমিটিতে যারা আছেন তারা ভবিষ্যতে দায়িত্ব নিয়ে খুব সহজে কাজ করতে পারেন। আমার যে কাজগুলো বাকি আছে, চেষ্টা করব সেগুলো সম্পন্ন করতে।' ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এখনই বলতে চাননি সালাউদ্দিন।

অনেক অপপ্রচার ছিল সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। গত আট বছরে বাফুফের সভাপতির চেয়ারে বসে দুর্নীতি করেছেন, ফুটবলের উন্নয়নে কোনো কাজই করেননি- প্রতিদ্বন্দ্বী মনজুর কাদেরের নেতৃত্বে 'বাঁচাও ফুটবল' প্যানেল এমন অভিযোগ করে আসছিল। সালাউদ্দিনকে হটানোর জন্য বাংলাদেশ সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান পোটনকে দাঁড় করান কাদের। এক সময়ের দুই বন্ধু প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনী লড়াইয়ে যোগ হয় নতুন মেরুকরণ। কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েন সালাউদ্দিন। শঙ্কা জাগে তৃতীয় মেয়াদে সভাপতি পদে তার নির্বাচিত হওয়া নিয়ে। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে দেন ১৩৪ জন কাউন্সিলের ৮৩ জন। তারা আগামী চার বছরের জন্য বেছে নেন সালাউদ্দিনকে। দ্বিতীয় হওয়া কামরুল আশরাফ পোটন পান ৫০ ভোট।

জিততে পারেননি। তবে ফল ঘোষণার পর সভাপতি পদে বিজয়ী সালাউদ্দিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কামরুল আশরাফ খান পোটন, 'সকালেও চিন্তা করেছিলাম আমি জিতব। জিততে পারিনি। তবে ফুটবলের উন্নয়নে সালাউদ্দিন যদি আমাকে সঙ্গে রাখতে চান, আমি থাকতে রাজি আছি।

বাফুফে নির্বাচনে জিতলেন যারা

সভাপতি

কাজী সালাউদ্দিন, প্রাপ্ত ভোট :৮৩

সিনিয়র সহসভাপতি

আবদুস সালাম মুর্শেদী (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত)

সহসভাপতি (চারজন) :কাজী নাবিল আহমেদ, প্রাপ্ত ভোট : ৯২,

বাদল রায়, প্রাপ্ত ভোট :৭৩, মহিউদ্দিন মহি, প্রাপ্ত ভোট : ৭২

তাবিথ আউয়াল, প্রাপ্ত ভোট : ৬৬

সদস্য (১৫ জন) :মো. শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, আমিরুল ইসলাম বাবু, হারুনুর রশীদ

মো. ইলিয়াস হোসেন, সত্যজিৎ দাস রূপু, বিজন বড়ূয়া, মো. ইকবাল হোসেন, মো. ফজলুর রহমান বাবুল, মো. আরিফ হোসেন মুন, অমিত খান শুভ্র, জাকির হোসেন চৌধুরী, মাহিউদ্দিন সেলিম, আবদুর রহিম, শেখ মো. আসলাম, মাহফুজা আক্তার কিরণ

No comments:

Post a Comment

Comments